“করোনা ভাইরাসডিজিজ ২০১৯” এর সংক্ষিপ্তরূপ “কোভিড-১৯”। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রোগটিকে ঘোষণা করেছে বিশ্ব মহামারী হিসেবে। এটি একটি সংক্রামক রোগ অর্থাৎ এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে একজন সুস্থ ব্যক্তিও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সুতরাং এ রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা। এ রোগের কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিরোধই এ মহামারীর সাথে মানুষের সংগ্রামের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকতে হলে সামাজিক দূরত্বের কোনো বিকল্প নেই।
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে সাধারণ ছুটির। ধীরে ধীরে দেয়া হয় বিভিন্ন জেলায় লকডাউনের ঘোষণা। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে চলেছে, সাথে সাথে বাড়ছে আতঙ্ক। পুরো বিশ্বের সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষও আজ ঘরে বন্দী। জরুরী প্রয়োজনেও ঘরের বাইরে বের হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব পূরণে একমাত্র সহায় ই-কমার্স। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সকল পণ্যসামগ্রী অনলাইনে কেনা।অনলাইন শপগুলো গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয় পণ্য। করোনা পরিস্থিতিতে ই-কমার্সই কেনাকাটার সবচেয়ে নিরাপদ পন্থা। ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী পাওয়া যাওয়ায় ই-কমার্সের প্রতি মানুষের আগ্রহও দিন দিন বাড়ছে।
করোনা পরিস্থিতিতে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ যাতে পৌঁছে যায় মানুষের চৌকাঠে, সেটিও নিশ্চিত করছে ই-কমার্স। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে জরুরী ওষুধ। বাংলাদেশে ই-কমার্সভিত্তিক বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে ওষুধ, দিচ্ছে হোম ডেলিভারি। বিভিন্ন ফার্মেসিও এই দুর্যোগকালীন সময়ে সেবা প্রদান করছে অনলাইনে। তারাও প্রয়োজনীয় ওষুধ হোম ডেলিভারির মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে গ্রাহকের বাড়িতে। এছাড়াও গৃহবন্দী মানুষের ওষুধের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে তরুণ উদ্যোক্তারাও নিজ উদ্যোগে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন জরুরী ওষুধ। অর্থাৎ এই সংকটকালে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেই ই-কমার্সের মাধ্যমে একজন রোগী নির্বিঘ্নে পেয়ে যাবেন তার প্রয়োজনীয় ওষুধ। এমনই কিছু প্রতিষ্ঠানের গল্প আজ তুলে ধরছি।
ফার্মেসি.কম.বিডি(Pharmacy.com.bd)
এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই গ্রাহককে দিচ্ছে হোম ডেলিভারি সেবা। প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলে অথবা নির্দিষ্ট ওষুধের নাম লিখে সার্চ দিলেই গ্রাহক পেয়ে যাবেন তার কাঙ্ক্ষিত ওষুধ। ওয়েবসাইট ছাড়াও হটলাইন নম্বরে (০১৯ ৯৯৯৯৭৬০৩-৫) ফোন করে ২৪ ঘন্টাই ওষুধের অর্ডার করা যাবে। নির্দিষ্ট ডেলিভারিচার্জসহ ওষুধের মূল্য পরিশোধ করা যাবে ক্যাশ অন ডেলিভারি বা মোবাইল পেমেন্টের মাধ্যমে।
বাংলামেডস.কম.বিডি(Banglameds.com.bd)
এই অনলাইন ফার্মেসিটি অর্ডার করার মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যে গ্রাহকের হাতে ওষুধ পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে। ওষুধের পাশাপাশি পাওয়া যাবে শিশুপণ্য,শিশুখাদ্য,মেডিকেল যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী। এছাড়াও তাদের রয়েছে একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্লগ। ক্রেতারা ওয়েবসাইট, হটলাইন(০৯৬৩৮-১২০-১৩০) ছাড়াও অর্ডার করতে পারবেন মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমে। ঢাকাভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কোনো চার্জ ছাড়াই সেবা প্রদান করছে সকাল ৮ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ।
ইফার্মা.কম.বিডি(ePharma.com.bd)
এখানে ক্রেতা ওষুধের পাশাপাশি পাবেন ফুড সাপ্লিমেন্ট, বিভিন্ন ধরণের শিশুপণ্য, সৌন্দর্য সামগ্রী। ওয়েবসাইট ছাড়াও ফোন করে(০১৯৩৩ ৩৩৬৬৫৫) অর্ডার করা যাবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ইফার্মা অ্যাপটির মাধ্যমেও অর্ডার করা যাবে। এ অ্যাপটি এমনভাবে তৈরি করা যেটি সময়মতো ওষুধ খেতে, বাচ্চাদের ভ্যাকসিনের সময় বা ডাক্তারের চেকআপের কথা মনে করিয়ে দেবে। ঢাকার বাইরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ওষুধ পাঠায় ইফার্মা।
ওষুধ.কম(ousud.com)
কোনো প্রকার ডেলিভারি চার্জ ছাড়াই গ্রাহকের কাছে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে ওষুধ.কম। ওয়েবসাইট থেকে ওষুধ বাছাই করে অথবা প্রেসক্রিপশনের ছবি আপলোড করে কিংবা হটলাইনে নম্বরে (০১৬৭১ ৯৬৮৭৭৭) ফোন করে ২৪ ঘন্টাই ওষুধের অর্ডার করা যাবে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকাভিত্তিক হলেও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যেমে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও ওষুধ সরবরাহ করে।
ওষুধওয়ালা.কম(oshudhwala.com)
ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অ্যাপের মাধ্যামেও অর্ডার করা যাবে ওষুধওয়ালা.কমে। এছাড়া রয়েছে হটলাইন নম্বর (০১৯৯৯ ৯২৯৮৬১)। ২৪ ঘন্টা ফোন করে অর্ডার করা যাবে সম্পূর্ণ ঢাকাজুড়ে।
লার্জফার্মা.কম(lazzpharma.com)
ওষুধ বেচাকেনার অন্যতম বড় এ প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনেও সেবা প্রদান করছে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বা ফোন (০১৩১৯ ৮৬৪০৪৯) করে অর্ডার করলেই ওষুধ পৌঁছে যাবে গ্রাহকের দোরগোড়ায়। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও সেবা প্রদান করছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
ঢাকাফার্মা.কম(dhakapharma.com)
এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু ঢাকাতেই তাদের সেবা প্রদান করে। ওয়েবসাইটে প্রেসক্রিপশন অাপলোড করার মাধ্যমে ওষুধ অর্ডার করা যায়। জরুরি ফোন নম্বর ০১৫১১ ৫৫১১৩৩।
ডায়াবেটিস স্টোর (diabetesstore.com.bd)
বিশেষভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের প্রয়োজনীয় সকল ওষুধ, পরীক্ষার যন্ত্র, নিরাপদ ডায়াবেটিক ফুড, ফুড সাপ্লিমেন্ট সহ পুরো দেশেই ওষুধ সরবরাহ করে থাকে এই অনলাইন মেডিকেল স্টোরটি। শনি থেকে বৃহস্পতিবার, সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অর্ডার নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তাদের হটলাইন নম্বর ০৯৬৩৯৪০০৬০০।
গোমেড কিট
অলাইনভিত্তিক ওষুধ ডেলিভারির এ প্লাটফর্মটি ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ২৪ ঘন্টা সেবা দিচ্ছে অ্যাপের মাধ্যমে। তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ঢাকা জুড়ে।
এছাড়া অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি, দারাজ এসব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের জন্য রয়েছে আলাদা ক্যাটাগরি। ‘ইভ্যালি এক্সপ্রেস ফার্মেসি’ ঢাকাসহ মোট ২৬ টি জেলায় সর্বোচ্চ ৩৬ ঘন্টায় মধ্যে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ওষুধ। দারাজের ডিফার্মা ক্যাটাগরিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধ। পাঠাও, সহজ, ফুডপান্ডা, পেপারফ্লাই এ সকল প্রতিষ্ঠানও দিচ্ছে ওষুধের হোম ডেলিভারি।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সেবা ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘আর এক্স মেডিসিন’ ও ‘একেএস ফার্মেসি’র মতো প্রতিষ্ঠান। মানুষকে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করতে এ সকল প্রতিষ্ঠানও ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাহকের দোরগোড়ায়।
‘উপহারবিডি.কম(upoharbd.com)’ নামের অনলাইন প্রতিষ্ঠানটি ওষুধের পাশাপাশি বিক্রি করছে চিকিৎসা সামগ্রীও। হুইলচেয়ার, রক্তচাপ মাপার যন্ত্রসহ নানা চিকিৎসাসংক্রান্ত সরঞ্জাম তারা পৌঁছে দিচ্ছে মানুষের বাড়িতে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গ্রাহকের ঘরে ঘরে ওষুধসহ নানা দ্রব্যাদি পৌঁছে দিচ্ছে চট্টগ্রামের বৃহত্তম অনলাইন মেডিকেল শপ ‘ইমেডি (Emedi)’। ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয় তারা। ফেনী পৌর এলাকা ও সদর উপজেলায় জরুরী ওষুধ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে ‘হ্যালো ফেনী’। কোনো ডেলিভারি চার্জ ছাড়াই এই জরুরী অবস্থায় সেবা প্রদান করছে তারা। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী গোপালগঞ্জ পৌরসভায় ওষুধ হোম ডেলিভারি দিচ্ছে ‘অনলাইন ওষুধ ডেলিভারি, গোপালগঞ্জ’। ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘স্টেপ গাইবান্ধা অনলাইন শপ’ ঘরে থাকা মানুষের সুবিধার্থে বাড়িতেই পৌঁছে ওষুধসহ নানা প্রয়োজনীয় সমগ্রী।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করা। জরুরি প্রয়োজনেও যেন কেউকে বাইরে না বের হতে হয় সে ব্যাপারটিই নিশ্চিত করছে ই-কমার্স। জীবন বাঁচাতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ কিনতে গিয়ে যাতে কেউ করোনাতে আক্রান্ত না হয়ে পড়ে সে ভয়টিই দূর করছে ই-কমাার্স গ্রাহকের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিয়ে। সত্যিকার অর্থেই ওষুধ এখন ক্রেতার দোরগোড়ায়।