আমার পড়ার টেবিল বারান্দার পাশে। এই লেখাটা লিখতে লিখতে বাইরে তাকালাম। বিকেল পড়ে আসছে। মৃদু হাওয়া বইছে। বারান্দায় রাখা বাগানবিলাস ফুলগুলো নাচ করছে সেই বাতাসের সংগীতে।”দুঃখ যখন বিলাসিতা” এ নিয়ে কিছু লিখব ভাবছিলাম, তখনই ফুলের নৃত্য দেখে কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলাম। ভুলে গেলাম লেখা শেষ করার কথা। উপভোগ করলাম বর্তমানকে। লেখায় যখন ফিরে এলাম, তখন মনে হলো “অতীত আসলেই মধুর, ভবিষ্যৎ আশাপূর্ণ।”
যাহোক মূল বিষয়ে আসি,দুঃখকে কেন বিলাসিতা বলেছি? কারণ ”সামর্থ্য আছে কিন্তু প্রয়োজন নেই, এমন জিনিসের প্রতি দুর্বলতাই হল” বিলাসিতা।তাহলে বুঝতেই পারছেন দুঃখ একরকম বিলাসিতা কেন? কারণ দুঃখবিলাস হলো ঠিক সেই সকল দুঃখ নিয়ে দুঃখ করা, যে সকল দুঃখের অস্তিত্ব আপনার জীবনে বাস্তবে নেই। আজকাল প্রায় সকল তরুন-তরুণীকেই বলতে শুনা যায়, “ভালো লাগে না”। এদের শতকরা ৯৯ ভাগই দুঃখবিলাসী। চারপাশে খুব কম মানুষকেই খুঁজে পাওয়া যায়, যার কোনো দুঃখ নেই!
আরে ভাই, কিসের এত দুঃখ? এই প্রশ্নটা যখনই কাউকে করবেন, দেখবেন খুব কম মানুষই যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ দেখাতে পারছে না। এ পৃথিবীতে দুঃখ করার মতো অনেক কিছু আছে।সুখ-দুঃখ নিয়েই মানবজীবন। এমন অনেক মানুষ আছে যারা শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ না কিন্তু তারাও চেষ্টা করছে জীবনটাকে সুন্দরভাবে যাপন করতে। কিন্তু আপনি খুব অল্পেই দুঃখী মানুষের তকমা লাগাতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন,করছেন দুঃখ নিয়েও বিলাসিতা। অনেকটা “সুখে থাকতে ভূতে কিলায়” কথাটার মতো।
বাস্তবে দুঃখ বিলাসিতা চিন্তাকেন্দ্রিক একটি সমস্যা। যারা পরিশ্রমী বা আত্মবিশ্বাসী তাদের খুব কমই দুঃখ নিয়ে এরম বিলাসিতা করতে দেখা যায়, কারণ তারা আত্মউন্নয়নে এতই ব্যস্ত যে তারা বলে, ”ভালো লাগবে না কেন, ভালো লাগতেই হবে।” অপরদিকে অলস, পরনির্ভরশীল কিছু মানুষ যাদের তেমন কোন সমস্যা বা কষ্ট না থাকার পরেও হতাশা, অতীতকেন্দ্রিকতা নিয়ে নিজের চারপাশে গড়ে তোলে মিথ্যা দুঃখের ছত্রছায়া। যে ছায়া তাকে জীবনের রৌদ্রোজ্বল আলো থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।তাই দুঃখ বিলাসিতা দূর করতে আপনার চিন্তাজগতে পরিবর্তন আনা সবচেয়ে বেশী জরুরী।সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে,”যে দুঃখের অস্তিত্ব নেই তা নিয়ে জীবন কাটাবো নাকি একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরিতে নিজের মেধাকে বা নিজের চিন্তাকে কাজে লাগাবো?”
এবার কিছু সমাধানের উপায় তুলে ধরছি। মূলত দুঃখ বিলাসের সৃষ্টিই হয় নেতিবাচক চিন্তা থেকে। তাই ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে বই পড়তে পারেন। তবে সেই বই হতে হবে অবশ্যই ভালো চিন্তার বা আইডিয়ার,যেখান থেকে আপনি এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাবেন।গান শুনতে পারেন। আবার অনেক সময় মনের অজান্তেই আমরা নেগেটিভ চিন্তা করা শুরু করে দেই। তাই আপনি কি চিন্তা করছেন তা নিয়ে সচেতন থাকলেই দুঃখবিলাস করা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। প্রতি এক ঘণ্টায় নিজেকে প্রশ্ন করুন ,”আমার চিন্তাগুলো কি ইতিবাচক?” নিজেকে প্রশ্ন করতে জানুন। নিজের চিন্তাজগত সম্পর্কে সচেতন থাকা ভীষণ প্রয়োজন, ভালো থাকার জন্য।
একটি বছরে ৩৬৫ দিন, ৮ হাজার ৭৬০ ঘণ্টা, সাড়ে পাঁচ লাখ মিনিট। প্রতিটি দিন ঘণ্টা বা মিনিট যে ভালো কাটবে, সেটা আশা করা বোকামি। তবে আমাদের আশা হওয়া উচিত, যখন যেই মিনিটে যেই সেকেন্ডে আছি, সেটা যেন আমরা সবাই পরিপূর্ণভাবে ভালোথাকি। নিজেকে ভালোবেসে সবাই, ভালো থাকতে শিখুন। অতীতের স্মরণে, ভবিষ্যতের জন্য।
সকল দুঃখ ভুলে রবি ঠাকুরের গানের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই- “প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল একদিন নয় হাসিবি তোরা একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা ভাবনা কাহারে বলে সখী, যাতনা কাহারে বলে!”
অসাধারণ