প্রথম দেখাতেই যখন তিনি বলেন, আমি সকলের কাছে প্রিয় হওয়াটাকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করি ; সেই তিনিই যখন আবার উ তে উপস্থাপনাও না, উ তে উদ্যোক্তাও না, বরং উ তে উদারতাকেই বেছে নেন -তখন নড়ে চড়ে বসাই যায়। এই উদারতা ভিন্ন, তিনি অপ্রিয় সত্য প্রকাশেও উদার, উদার- ব্যক্তি বা পেশাগত জীবনেও।
আরাফাত রূপক! আরাফাত নামের অনেক অর্থ ; তারমধ্যে একটা হলো পরিচয় লাভ করা। আর আরাফাত রূপকের পরিচয় মেলা! ভয়েস ওভার আর্টিস্ট, উপস্থাপনা, উদ্যোক্তা, অভিনয়, ফ্যাশন ম্যাগাজিন ( বর্তমানে বিজনেস ম্যাগাজিন) সম্পাদনা, অভিনয় এবং আরো বিবিধ।
প্রায়শই আমরা বলি, পর্দার আড়ালের মানুষ। পর্দার আড়ালের মানুষের প্রকৃষ্ট ‘রুপক’ হলেন আরাফাত রূপক। এটা ঠিক, উপস্থাপনায় উনিই মঞ্চ আলো করে রাখেন, তবে বাকী অনেক কাজেই তিনিই পর্দার পেছন থেকে অনবরত সাহস জুগিয়ে যান অন্য কুশীলবদের।
টকস্টোরির সাথে ঘরবন্দী এই সময়টাতে দুরালাপনেই আলাপ সারতে হলো উনার সাথে। ভরাট কন্ঠ শুনে যে কেউ বলে দিতে পারেন এই বান্দা ভয়েস ওভার আর্টিস্ট না হলে হবেটা কে? কথাতে উঠে আসলো সেটাও – উনার সবচেয়ে ভালো লাগার জায়গাটাই হলো এই ভয়েস ওভার। পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম, যে বাকী পরিচয়গুলো? তড়িত জবাব, ঐ যে উদারতা! বলেই হেসে দিলেন।
একদম চিরায়ত প্রশ্ন – এত কিছু কেমনে বা কিভাবে? একদম রাখ-ঢাক না রেখে জবাব দিলেন দুইটা কারণ – একটা হলো পেটের দায়ে ; আরেকটা হলো এক কাজে একঘেয়েমি বোধ করেন। সৃজনশীলতা মুখে বলার নয়, চর্চা করার জিনিস। পেশার ভিন্নতা ও ভালোলাগার ভিন্নতা তার একটা কারণ অবশ্য।
এই পর্যায়ে এসে Da workers ( ইভেন্ট ফার্ম) নিয়ে বলা শুরু করলেন – Da workers মুলতঃ চায়না বেইজড বিভিন্ন কোম্পানী ও চাইনিজ অ্যাম্বেসির সাথে কাজ করছে ; লোকাল কোন ইভেন্ট তারা করছেন না এখনই! অর্ডার ও সাপ্লায়ার হিসেবেই এর কাজের পরিধি মুলতঃ। কপালের ভাজ দেখা না গেলেও গলার স্বর একটু উদ্বিগ্নই শোনালো! সামনের দিনগুলো সবার জন্য কঠিন ; যে মানিয়ে নিতে পারবে সে-ই টিকে থাকবে বলে মনে করেন রূপক।
উপস্থাপনা ও ভয়েস ওভারের কথা আবারো স্মরণ করালাম ; গলার স্বরে আলাদা আমেজে বুঝাই যায়, কত প্রিয় জায়গা এটা। তবে কথা ঐ একটাই, সবার কাছে প্রিয় হতে চান না। রূপকের বাকী সব কাজে পেটের দায়টা চলে আসে ; তবে এসবের উপরে থাকে এই দুই জিনিস! স্কুল / কলেজের চৌকাঠ পেরিয়ে এখন রীতিমতো কর্পোরেট শো করছেন, নেহাতই এর প্রতি ভালো লাগা থেকেই। ভয়েস-ওভারের ব্যাপারটা তো আরো এক কাঠি সরেস! তবে স্টার মার্ক দিয়ে একটা শর্ত প্রযোজ্য ট্যাগ সবসময়ই লাগিয়ে রাখেন – Only if you can afford me! ভালোলাগার জায়গায় কম্প্রোমাইজেশন চলে না।
টুকটাক অভিনয়ও করেছেন ; সেই একই কথা, একঘেয়েমি যাতে না আসে! তবে, চট্টগ্রামে থেকে ঢাকার মিডিয়া কানেক্ট করা কষ্টসাধ্য, এটা বলতে কোন দ্বিধা করলেন না।চট্টগ্রামের মিডিয়া সিনারিও আরো অনেক বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করেন তিনি। মিডিয়া বা কালচারের এই যে জগত ; এটার মোহ কাটানো নাকি হয়ে উঠে না। তাই নিজেদের উদ্যোগ / স্টার্টআপগুলোও অনেকটা ঐ ঘেষা। হোক সেটা Da workers বা অন্য কোন ভেঞ্চার।
কথা প্রসঙ্গে, ফ্যাশন সিনারিওর কথা চলে আসে ; ক্লিক ফ্যাশন ম্যাগাজিনের ( বর্তমানে এটা বিজনেস ম্যাগাজিন) সহ-সম্পাদক রূপক! চট্টগ্রামে এটা বেশ দুরূহ কাজ,শুধু ফ্যাশন টার্গেট করে পূর্ণাঙ্গ ম্যা গাজিন চালানো। তবে তাঁর সম্পাদক ( জালাল উদ্দীন সাগর) এই অসাধ্যের কারিগর।যদিও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলে দিলেন, এই সেক্টর অযোগ্য-অথর্বের দখলে গিয়েছে। ভালোলাগার জায়গাগুলো আসলে ঘুণে ধরে গেলে মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। নিজেকে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির হর্তাকর্তা দূরে থাক ; নিতান্ত সাধারণ একজন ভেবেই শান্তি পান। তবে এটাতো বুঝেন ( এতদিনের পথচলায়) কে যোগ্য আর কে অযোগ্য!
একেবারে মোক্ষম প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলাম ; ইয়ুথ এনগেজমেন্ট বা তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে কী ভাবছেন? ভাবতে হলো না মোটেও ; জানালেন চাঁদ উঠলেই সবাই দেখবে। নিজেদের চলমান প্রজেক্টগুলো থেকেই তরুণদের এনগেজ করা যায় এমন জিনিস নিয়ে আসবেন সহসাই ; পাইপলাইনে আছে আরো কিছু কাজ। পুরোটা এখনই বলার পক্ষে নন, জানালেন যখন নিয়ে আসবো- তখন না হয় আবারো বসবো!
আরেকটা বিষয়, নিজের ভালোলাগা কখনোই ভুলতে নেই বলে মনে করেন রূপক। জীবিকা অমোঘ জিনিস, এটা বাস্তবতা। তবে নিজের শেকড় ভুলে যাওয়া নিজের সাথেই ভন্ডামী। জীবনে চড়াই-উৎরাই জিনিসটা Part of life. আর ভালোলাগার জিনিসটা Part of Heart. আপনি উদ্যোক্তা হোন, ম্যাগনেট হোন বা হোন নিতান্ত কোন ছা-পোষা! ভালোলাগার জায়গায় কোন কম্প্রোমাইজ চলে না।