এগ্রোটেক স্টার্টআপে সম্ভাবনা

শুধু একটা ভাইরাস ; মানুষকে অস্পৃশ্য তো বানিয়েছেই, পুরো দুনিয়ার খোল নলচেই মনে করেন এক প্রকার পাল্টে দিয়েছে! কোভিডের কথাই বলছি। সোশ্যাল ডিসটেন্সিং, লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন এই শব্দগুলো মানবজাতির ছিলোনা ; কিন্তু এই শব্দগুলোই মানবজাতির হয়েছে। একটু ভাবুন তো, চোখের সামনে এমন কোন সেক্টর যেটা কোভিডের কারণে খাদের কিনারায় এসে পৌঁছোয় নি। কী এয়ারলাইন্স বলেন বা পর্যটন, পাব-ক্যাসিনো বা শপিং মল, বিলিয়ন ডলারের স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি বা মাল্টি বিলিয়ন ডলারের এন্টারটেইনমেন্ট জগত! লিট্যারেলি, কেউ বাঁচাতে পারেনি কোভিড থেকে নিজেকে ; সবই থমকেছে, শুধু মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো ছাড়া।

একটা বিষয় পরিষ্কার, যে সব থমকে গেছে এসব লাক্সারী ছাড়া মানুষ বোধ-হয় চলতে পারে ; অন্তত গত চারমাসে তাই তো বুঝা গেলো, এসব লাক্সারী জগতকে দুমড়ে -মুচড়ে দেওয়ার পর কেমন হবে, কোভিডের পরের টার্গেট যদি খাদ্য- বস্ত্রের মত মৌলিক চাহিদায় এসে পড়ে! বলা বাহুল্য, অনেকাংশে সেটা পড়তে শুরু করেছে, হয়তো আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। কোভিডের এই সময়ে অনলাইন এনগেজমেন্ট বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে বলা যায়, ট্রেনিং / কোচিং ইন্ডাস্ট্রি সার্ভাইভ করে যাবে, বেশ ভালোভাবেই! তবে, পেটে ক্ষুধা নিয়ে হয়তো ট্রেনিং / কোচিং নিজেই একটা বিলাসিতার নাম হয়ে যাবে দিনশেষে।

রাজনীতি, অর্থনীতি, বিশ্ব ব্যবস্থা, ষড়যন্ত্র নীতি অনেক কিছুই শুনে ফেলেছি এ কয়দিনে আমরা ; এবার বোধহয় এসব দিকেও ভাবা দরকার। আমাদের কৃষির কথাই বলছি আসলে ; খাদ্য যে কত বড় নিয়ামক আমাদের এই লাক্সারীর দুনিয়ায় তা কোভিড আবার দেখিয়ে দিল! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে কোভিডের ভয়াবহতা নিয়ে নিয়ত সচেতন করে চলেছে মানুষকে ; বিপরীতে ইউএন, FAO আর বাকীরা শোনাচ্ছে আসন্ন দুর্ভিক্ষের কথা!

অমর্ত্য সেন একবার এক দুর্ভিক্ষ মডেলে দেখিয়েছেন, যে দুর্ভিক্ষে আসলে খাবারের অভাবে মানুষ মরে না, টাকার অভাবে মরে। কারণ, খাবার কেনার মত টাকা মানুষের থাকেনা। কোভিড সম্ভবত সেই মডেলকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলো এবার। কারণ, মানুষ তো ঘরেই বসা, উৎপাদনই তো বন্ধ! আর কৃষিকেন্দ্রীক সাপ্লাই চেইনও কোভিডের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে আর টাকার কথাতো বলতে হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই মানুষের নাভিশ্বাস চরমে উঠেছে ; টাকাও যে ফুরিয়ে আসছে। সম্ভবত এটাই সময় ; আমাদের ইনডিভিজুয়াল ফার্মিং এ মন দেয়ার। সমন্বিত টীকা কার্যক্রমে আমরা শুনি- ” বাদ যাবেনা একটি শিশু ” ; সম্ভবত বাদ যাবেনা এক টুকরো জমিও – এইরকম কিছু একটার দ্বারপ্রান্তে আমরা চলে এসেছি।

ছাদ কৃষি, আরবান কৃষি, শখের কৃষি যে নামই দেন ; নেমে এবার পড়তেই হবে। টাকা যে আর খাবারের নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা! আপনি এসব নিয়ে স্টার্টআপও ভাবতে পারেন ; তবে শুরু না করলে ভাবনাটা যে ভাবনাতেই থেকে যাবে! সরকারের স্টার্টআপ বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের অগ্রাধিকার সেক্টরগুলোতে কৃষিও একটা।ছাদ কৃষি অলরেডি একটা সেনসেশন ; সাপ্লাইন চেইন নিয়েও ভাবতে পারেন ভিন্ন কিছু, ” একটি বাড়ী, একটি বাগান ” অথবা ” একটি বাড়ী, একটি নার্সারী ” এরকম আইডিয়া নিয়ে আসার সময় কিন্তু এখনই। সমস্যা যে সম্ভাবনা নিয়ে আসে তা প্রমান করার সময়ও এখন ; পড়ে থাকা খালি ড্রামটা ছাদে উঠে যান কাল সকালেই অথবা কোদাল কাঁধে নিজের জন্য করবো বলো পতিত জমিটি চষে ফেলুন!

লিখেছেন : রিদয়ানুল ইসলাম

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।