মেডিস্টোর; আপনার ভার্চুয়াল সেবক!

পিপিই, সার্জিক্যাল মাস্ক, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার কিংবা পালস অক্সিমিটার এমন আরো বিবিধ শব্দ এই কয়দিনে জানা হয়েছে আমাদের।একটা কাড়াকাড়ি অবস্থা দেখেছি আমরা এসব নিয়ে। আসলে এগুলো সবসময়ই দরকারী অনুষঙ্গই ছিলো। করোনায় বেশ বড় হাওয়া লেগেছে এসবের পালে। করোনা দেখিয়েছে এসব সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সরঞ্জামের গুরুত্ব আসলে কতটুকু। তবে কামরুল হাসান বোধহয় একটু আগেই বুঝতে পেরেছিলেন নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদির গুরুত্ব কতটুকু! আর তাই তাঁর হাতে রচিত হয়েছে “মেডিস্টোর” আখ্যানের।

হুম, কামরুল হাসানের- মেডিস্টোর! আখ্যানই বলা যায়। এই যে চারপাশেই আমরা অবিরত শুনে চলেছি সচেতনতার বার্তা, সুস্থ্য থাকার বার্তা, নিজেকে সামলে রাখার বার্তা, পরিবার ও কাছের জনকে আগলে রাখার বার্তা ; সেই একটা জায়গা থেকে ভাবুন তো মেডিকেল সরঞ্জামাদির ভুমিকা! একটা নেবুলাইজার মেশিন বা একটা প্রেশার মাপার যন্ত্র অথবা একটা ডায়াবেটিক টেস্ট মিটার কিংবা একটা অক্সিজেন বার; যার উপর দিয়ে এই বিপদ গিয়েছে তিনিই অনুধাবন করতে পারেন দরকারী সময়ে এসব জিনিস কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

সেই জায়গাটাতেই ভাবনা, পরিকল্পনা আর কাজের সমন্বয় ঘটানো মানুষটা কামরুল হাসান। মেডিস্টোর এর নাবিক তিনি! তবে এই জাহাজ চালানোর শুরুটা মোটেও সুখকর কিছু ছিলোনা।পথ মসৃণ ছিলো না একদমই। একা হাতে শুরু করা প্রতিষ্ঠানে এখন ডালপালা গজিয়েছে বিস্তর। একেবারে স্বল্প পরিসরে শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির ভ্যালু আজ টাকার অংকে কোটিরও বেশী ছাড়িয়েছে।

ই-কমার্স ব্যবসাই যেহেতু করবেন, তাহলে স্বাস্থ্যখাত কেন? আরো আকর্ষণীয় বহু বিষয় তো ছিলোই। এই প্রশ্নের জবাব কামরুল অনেককে অনেকভাবেই দিয়েছেন ; তবে আসল কথা একটাই- ভাবনায় নতুনত্ব, চ্যালেঞ্জ নেয়া এবং সেটা হ্যান্ডেল করতে পারা এবং সেটায় লেগে থাকা। হয়তো অন্য আরো দশটা সেক্টরে নিজের ভাগ্য যাচাই করতে পারতেন; তবে চ্যালেঞ্জের হেরফের হতো না একফোঁটাও। এটাই সবচেয়ে ধ্রুব ও সত্য ব্যাপার।

স্বাস্থ্য সরঞ্জামের মত সেনসিটিভ জিনিসই বা কেন? কামরুল জানালেন, এই সেক্টর সেনসিটিভ সত্য, তবে লং টার্ম স্থায়ী ফিডব্যাক এই সেক্টরের মত করে আর কোথাও খুব একটা পাওয়া যায়না। এটা কিন্ত গ্রোসারী বেইজড ই-কমার্সগুলোর মত নয়; এখানে ক্লায়েন্ট মুলত ডেভেলপ করেছে Word of Mouth এর উপর ভিত্তি করেই। কারণ শুরুর দিনগুলো থেকে এখন অব্দি অনলাইন প্রমোশন বলতে কিছুই করেনি মেডিস্টোর। শুধু নিশ্চিত করেছে প্রোডাক্টের গুণগত মান আর কাস্টমারের সন্তুষ্টি। বলে রাখা ভালো, পুরো টীম আসলে ঐসময় তিনজনই সামলেছেন। সেই টীমটা এখন একটা অবয়ব পেয়েছে; একটা পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক রুপ এসেছে, হাসিও একটু চওড়া হয়েছে কামরুলের।

নিজে প্রোডাক্ট সোর্সিং থেকে শুরু করে নিজেই ডেলিভারী করা; চ্যালেঞ্জ নিতে যে পছন্দ করেন সেটা শুরু থেকেই প্রমাণ দিয়েছেন কামরুল। পুরো দিনে ২/৩ অর্ডারে সন্তুষ্ট থেকেছেন ; নিজের চেয়েও পণ্যের উপর আস্থা বেশী ছিল! একটা একটা করে বাছাই করা পণ্যে মেডিস্টোরের শেল্ফ আর স্টোর ভরিয়ে তুলেছেন তিনি। আর একটা একটা ক্লায়েন্ট মজবুত হয়েছে ক্লায়েন্ট-বেইজ। সে মেডিস্টোর এখন নিয়মিত নিজেরাই আমদানী করছেন বিশ্বের নামীদামী ব্র্যান্ডের মেডিকেল সরাঞ্জামাদী; এবং খুব শীঘ্রই মেডিস্টোরের নিজ ব্র্যান্ড নামেই আসছে আরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য। এভাবেই তো করতে হয় ; এখানেই তো চ্যালেঞ্জ নেয়ার মজার কথা বললেন কামরুল।

হেল্থ কেয়ার, মেডিকেল কেয়ার, বিউটি কেয়ার – কামরুলের বৈচিত্র্য তো এখানেই। ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারলেই স্পেসিফিক পণ্য আর রিলেটেড ফিচার বেশ নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। হেল্থ ব্লগের মত অনন্য সংযোজনও রেখেছেন তিনি তাঁর সাইটে। প্যাসিভ মার্কেটিং এর বেশ সুন্দর উপস্থাপন যেন। এতে করে লাভ হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকটাতেও নজর দেয়া গেলো! অদূর ভবিষ্যতে ভেঞ্চার এক্সপানশন বা পরিধি বা আওতা বাড়ানোর সময় এটা কাজে দিবে বলে মনে করেন কামরুল। তিনটা আলাদা সেগমেন্ট রাখা মানে অডিয়েন্স বা ক্রেতাদের সুযোগ -সুবিধার জায়গাটা বিস্তৃত করে দেয়া।

মেডিস্টোরের মার্কেটিং-এ কামরুল বিভিন্ন মেডিকেল সরঞ্জাম রেন্টাল এর পাশাপাশি কর্পোরেট টাই-আপকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন ইদানীং। অনেক সময়োপযোগী পন্থা তিনি এপ্লাই করছেন তার কোম্পানীর স্বার্থেই। হেলথকেয়ার পার্টনার হিসেবে আছেন, ইউনিসেফ, গ্রামীনফোন, স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড, এন আর বি ব্যাংক , বেসিস , নেক্সপার্ক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে । সি এম এইস, আইসিডিডিআরবি ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী মেডিকেল কলেজ, রেলওয়ে হাসপাতাল, র‍্যাব হেডকোয়াটার্স, কোষ্টগার্ড, থেকে শুরু করে সরকারী এবং আরো বিভিন্ন প্লাটফর্মে নিয়মিত পণ্য সরবরাহ করে মেডিস্টোর তাই পরিচিত ফেইস হয়ে উঠছে!

৫০ লাখ টাকার কোম্পানি, এত কোটি টাকার টার্নওভার, এসবের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ আসলে ‘দ্রুত সময়ে ‘ডেলিভারি, পণ্য নিয়ে অভিযোগ ‘শূন্যের ‘কোঠায় নামিয়ে আনা ইত্যাদি। ই-কমার্সকে আমরা যতটাই অনলাইন ড্রিভেন বলি না কেন ; আসলে Word of Mouth এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা কিন্তু দিনশেষে End Customer থেকেই আসে। কামরুল আর মেডিস্টোর ( দুটোই তো একই কথা) এর দৃষ্টি সেই জায়গাতেই। স্যাটিসফেকশনের জায়গা থেকেই মার্কেটিংটা হোক!

স্বাস্থ্যখাতে আসলে দীর্ঘস্থায়ী একটা পরিবর্তন হয়তো আসতে যাচ্ছে! মানুষের নিজে সচেতন হওয়ার ব্যাপারটা অনেক বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে এখন। আর এই সচেতনতার ভ্যানগার্ড হওয়ার লক্ষ্যটাই ছিলো মেডিস্টোরের ভিশন। কামরুলের লক্ষ্য উপলক্ষ খুঁজে পাক মানুষের ভালো থাকার মাঝে।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।