মাইন্ড শেপার : মনের ডাক্তার

মানসিক স্বাস্থ্য, ডিপ্রেশন, টেনশন, নির্ঘুম রাত, খিটখিটে মেজাজ, একা থাকার অভ্যেস,সুইসাইডাল অ্যাটিটিউড – আমরা আজকাল অহরহই এসব শব্দ শুনছি! চারপাশে অসংখ্য মানুষ আসলে এইসব ‘মনের’ ব্যাধিতে ভুগছেন! কেউ হয়তো জানেন বা বুঝেন বিষয়টি, আর কেউ অজান্তেই এসব ফেস করে চলেছেন।

মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এসব বিষয় আমরা খুব একটা পাত্তা দিই না এখনো! তবে ঠিকই, সুশান্তের মত সেলিব্রিটিদের ডিপ্রেশনজনিত মৃত্যুতে হা-হুতাশটা করে ফেলি। হ্যাঁ, কারো প্রতি কনসার্ন দেখানো অবশ্যই ভালো। তবে নিজের প্রতি, পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতিও সেই কনসার্ন দেখানো উচিত!

মাইন্ড শেপার আসলে সেই কনসার্নটুকুই দেখাচ্ছে! দেশে আসলে মানসিক বিভিন্ন সিনড্রোমে ভোগা মানুষের প্রকৃত সংখ্যার কোন হিসেব নেই। তারপরও বলা হয় এই সংখ্যাটা কোনমতেই ৩ কোটির নীচে নয়।স্বাস্থ্যের যে কোন প্যারামিটারেই এটা অ্যালার্মিং। মানুষের মনন ও মানসিকতার সেই জায়গাটাতে মাইন্ড শেপারের বিচরণ।

কি করে মাইন্ডশেপার! কাব্যিক ঢংয়ে বললে ; আপনার মনের অলিগলির মরা গাঙ্গে জোয়ার আনে মাইন্ড শেপার। আর একদম সোজা সরল ভাষায় বললে আপনার মনের জগতে স্থিতিশীলতা আনার কাজটা করে মাইন্ড শেপার।

অনলাইন কাউন্সেলিং, কাপল কাউন্সেলিং, ডাইভোর্স কাউন্সেলিং, মেডিটেশন, ফ্যামিলি কাউন্সেলিং,রিলেশনশিপ কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট – বেশ ভারিক্কি নাম মনে হতে পারে সব!আদতে আপনার জীবনে আপনি ২৪/৭ এই বিষয়গুলো নিয়েই কাটাচ্ছেন। আপনার যাবতীয় সমস্যাগুলো কিন্তু কোন না কোনভাবে এগুলোর সাথে রিলেটেডও! এবং এই বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ দৈনন্দিন জীবন যাপনকে অনেক সহজ করে তোলে বৈকি।

এই করোনাকালে একটা কথা বেশ চাউর – মানসিক শক্তিই নাকি সবচেয়ে বড় সম্বল! আসলে, মানুষের মস্তিষ্ক, স্নায়ু, অন্যান্য অর্গান এগুলো ইন্টার রিলেটেড।তাই শরীরের যথাযথ কাজ করার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য অপরিহার্য জিনিস।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দেশে খুব একটা কাজ আসলে হয়নি বলতে গেলে। স্টার্টআপের দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন এর বিস্তৃত সুযোগ আছে, তেমনি মানুষের ওভারঅল শারীরিক দৃষ্টিকোণ থেকেও রয়েছে কাজের প্রচুর সুযোগ। আর মানসিক গঠনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় কিন্তু শৈশব। এসব ভেবে মাইন্ড শেপার প্যারেন্টিং কাউন্সেলিং যেমন রেখেছে, তেমনি রেখেছে চাইল্ড কাউন্সেলিং এর মত বিষয়ও।

প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক ; মাইন্ড শেপারের ভিশনটা কী! এককথায়, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা। তবে উদ্যোক্তারা ভিন্ন কিছু জানালেন বটে। মানসিক স্বাস্থ্যকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী যে আমরা এটাকে স্বাস্থ্যের অংশ হিসেবেই গুনিনা, সেই ট্যাবু ভাঙাটাই তাঁদের মুল উদ্দেশ্য। মানসিক স্বাস্থ্য আর দশটা বিষয়ের মতোই আমাদের নিত্য অনুষঙ্গ। সেই বিষয়টা নিয়ে কথা হোক, কলরব হোক, বাড়ুক সচেতনতা; এটাই এঁদের চাওয়া।

করোনায় পারিবারিক বিপর্যয়ের কথা আমরা শুনেছি ; মানসিক চাপের কথা তো বলতে হচ্ছে না নতুন করে। মানুষের মননে একটা পরিবর্তন দেখা দেয়া শুরু করেছে। পোস্ট কোভিড সেই এফেক্ট হয়তো আরো দীর্ঘ হবে। দীর্ঘদিন স্কুল কালচারে মানিয়ে নেয়া বাচ্চাটার মনের জগতটাই বা কেমন হবে? চাকরি নিয়ে দোটানায় পড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তারই বা কী হাল হবে! নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতো মানুষ ; সেই মানুষগুলো যখন তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই মনের জগতে একটা পরিবর্তন আঁচ করা যায়।

সেই পরিবর্তনের পথদ্রষ্টা মাইন্ড শেপার!বেশী কিছু করা লাগছে না আসলে, শুধু ফেসবুকে ঢুঁ মেরে ওঁদের পেজ ঘুরে আসুন একবার ; তাঁদের কর্মকান্ড দেখুন!

মননশীল মানুষগুলোর এই কাজ গন্তব্য খুঁজে নিক অচিরেই ; মানসিক স্বাস্থ্যও হোক কথা বলার জন্য উপযুক্ত বিষয়।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।