প্রতিদিন আমরা ঘুমোতে যাবার সময় এবং ঘুম থেকে ওঠার পরই যেই জিনিসটা সবার আগে হাতে তুলে নিই সেটা নিঃসন্দেহে মোবাইল ফোন। আর মোবাইল হাতে নিয়েই আমরা চলে যাই কোন না কোন এপ্লিকেশনে! কেউ দিন শুরু করি মেইল দেক করে, কেউবা ফেসবুকে ঢু মেরে! আজকাল সবকিছুতেই এপস! এন্ড্রয়েড, আইওএস মিলেমিশে এক যাদুর কাঠির ছোয়ায় আমাদের জীবন করে তুলেছে এপসময়! সবকিছুতেই এপস। মোবাইল পেমেন্ট থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা বাণিজ্য বিজ্ঞান এমনকি মহাকাশ…সবেতেই এপস এর রাজত্ব।
বৈশ্বিক বিজনেস বোদ্ধারাও বলে চলেছেন এ বাজার আরো অনেক অনেক বড় হবে! বর্তমান সময়ের স্টার্টআপ গুলোর দিকে তাকালেও তা সহজেই বুঝতে পারি আমরা! ১০ টার ৮ টারও বেশি স্টার্ট আপ শুরু হয় এপস দিয়ে! তো আজকে কথাও বলব সেই এপস নিয়েই! দেখে নিই ২০২০-২১ সালের ট্রেন্ডিং কিছু মোবাইল এপ্লিকেশন, যা মাতিয়ে রেখেছে পুরো বিশ্ব…
SLACK
যারা আমরা ব্যবসা বানিজ্য বা কোনো এক কমিউনিটির সাথে সংযুক্ত তারা সবাই মোটামোটি স্ল্যাক এর কথা জানি! স্ল্যাক বিসনেস বা অর্গানাইজেশনাল কমিউনিকেশনের জন্য এক চমতকার প্ল্যাটফর্ম। মেইলের জটিলতা কমাতে এবং সহজবোধ্য বিসনেস কমিউনিকেশনই স্ল্যাকের উদ্দেশ্য। স্ল্যাকে বিভিন্ন কাজের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল। চ্যানেলগুলো আবার পারস্পারিক সংযুক্ত…কাজেই খুব সহজেই এপসের মাধ্যমে আনওয়ান্টেড জিনিসপাতি এভয়েড করেই যোগাযোগ করা সম্ভবপর হয়। স্ল্যাকের আরো এক বড় সুবিধা হলো টিম মেম্বাররা কোলাবোরেশনের মাধ্যমে কাজ করে ফলে সহজেই কেউ কোনো ক্লাউড ডকুমেন্ট সহজেই এডিট বা আপ্লোড করতে পারে। ফলে সবকিছুই হয়ে যায় সহজতর! আর তাই এইসময়ে স্ল্যাক যে অনতম ট্রেন্ডি এক এপ্লিকেশন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
Coursera
কোর্সেরা কোর্সেরা! লকডাউনের শুরু থেকেই যারা প্রোডাক্টিভ কাজে সময় ব্যয় করেছি, একবার হলেও ঘুরে এসেছি কোর্সেরার কোর্স গুলো থেকে! বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট সহ গুগলে এমাজনের মতো টেক জায়ান্টদের লঞ্চ করা কোর্স করতেও কোর্সেরার জুরি নেই! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেকগুলো কোর্স ফ্রি তে করার সুযোগ করে দিয়েছিলো কোর্সেরার মাধ্যমে! ইতিহাস অর্থনীতি ভাষা বিজ্ঞান প্রোগ্রামিং ম্যাথমেটিক্স কমিউনিকেশন বা প্রোফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কী নেই কোর্সেরায়! তাদের মোবাই এপ্লিকেশনেও রয়েছে ২৬০০ এরও বেশি কোর্স যার স্বাদ নিচ্ছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার স্টুডেন্ট! কাজেই কোর্সেরা যে ট্রেন্ডিং এপ হবে এতো জানাই ছিলো!
Proloquo2Go
কী নামটা বেশ অচেনা? আবার নামটা একটু অদ্ভুতও তাইনা? তবে নাম যেমনই হোক, এই এপসটি কিন্তু কাজে ২২ ক্যারেট খাটি সোনা! প্রোলোকো টু গো এপসটি তৈরী কথা বলতে না পারা মানুষদের জন্য। বিশেষত যারা স্টুডেন্ট। এই এপস ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সুজেই তারা নিজেদের কমিউনিকেশন ডেভেলপ করতে পারে। অগমেন্টেড রিয়েলিটি টেকনলজি ব্যবহার করে এই এপস ১০০০০ এরো বেশি শব্দও কে কাস্টমাইজ করে বাক প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে ৪০০ মিলিয়নের অধিক মানুষ আছে পৃথিবীতে যারা আঙ্গশিক বা পূর্ণ বাক প্রতিবন্ধী। কাজেই এই এপস তাদের জন্য খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। আশাতীতভাবেই প্রোলোকো টু গো এপসটি ২০২০ সালের অন্যতম ট্রেন্ডি এপ।
Netflix
নতুন করে বলার মতোন কিছুই নাই নেটফ্লিক্স কে নিয়ে! ওয়েবাসিরিজ বলুন বা মুভি, ডিজিটাল বিনোদনের অন্যতম সেরা সেবা যে নেটফ্লিক্স দিচ্ছে তা সন্দেহাতীতভাবেই বলা যায়! ওয়েবসাইটের মতো তাই তাদের মোবাইল এপ্লিকেশনও রয়েছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে! করোনা পরিস্থিতি আসার পর থেকেই ঘরবন্দী মানুষের একমাত্র বিনোদোনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি। কাজেই করোনাকালীন সময়ে অনেকের ব্যবসার সর্বনাশ হলেও নেটফ্লিক্সের যে পৌষ মাস তা বলার অপেক্ষা রাখে না!
Sleep cycle & Calm
স্বাস্থ্য বিষয়ক এই দুইটি এপসের কথা বলব একসাথে। আমাদের জেনেরেশনের অন্যতম সমস্যা ইনসোমেনিয়া বা নিদ্রাহীনতা। কিন্তু মেডিকেল সাইন্স বলে ঘুম মানুষের জন্য খাওয়া বা শ্বাস নেবার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। রাতজাগা এই পেচাদের নিজের ঘুমের সময় মনে করাতে এবং নিয়মিত আপডেট জানাতে তাই স্লিপ সার্কেল এপ্লিকেশনের জুরি মেলা ভার। এই এপস এর মাধ্যমে আপনি আপনার স্লিপিং টাইম এবং স্লিপিং সার্কেল মনিটরিং করতে পারবেন, নির্দিষ্ট টার্গেট সেট করতে পারবেন এবং টার্গেট পূরণের জন্য প্রয়জনীয় সহায়তাও পাবেন। যারা রাতজাগা পাখি থেকে এক সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান, তাদের জন্য স্লিপ সার্কেল এক অনবুদ্য এপ্লিকেশন।
স্লিপ সার্কেল যেমন একদিকে আপনার ঘুম ঠিক রাখে, Calm আপনার মেজাজ ঠিক রাখতে সাহায্য করে! মস্তিষ্কের প্রশান্তি, মেডিটেশন, যোগাসন ইত্যাদির মাধ্যমে Calm আপনাকে করে তুলবে ধীর, স্থির,ফোকাসড এবং ধৈর্যশালী একজন মানুষ। এপ্লিকেশনটির বিভিন্ন লেভেলে বিগিনার থেকে শুরু করে এক্সপার্ট লেভেল পর্যন্ত অনেল লেভেল আছে যা বিভিন্ন মেয়াদী হয়ে থাকে! আরো একটা কথা, Calm কিন্তু মানুষের তৈরী হ্যাপিয়েস্ট এপ্লিকেশনের পুরস্কার প্রাপ্ত!
Zoom
এতক্ষণ ধরে বোধহয় সবাই অপেক্ষা করছিলেন যে কখন জুম এর নাম আসবে! Here it is! লকডাউন শুরু হবার পর থেকে একবারের জন্যও জুম এপস টি ব্যবহার করেন নি এমন মানুষ মনেহয় খুজেও পাওয়া যাবে না! ভিডিও কনফারেন্স, মিটিং বা আড্ডা সব কাজেই জুমের সরব পদচারণা! শুধু ভিডিও কনফারেন্সিং এর এপস বলে যে জুম জনপ্রিয় তা নয়। হাই কোয়ালিটি, হাই স্পিডসহ চ্যাটিং, হ্যাণ্ড্রাইজিং সহ হাজারো অপশন সমৃদ্ধ জুম আসার পর থেকেই জায়গা করে নেয় ফর্মাল ওয়াল্ডে! আর এই করোনাকালীন সময়ে যে জুমের ব্যবসা ফুলে ফেপে উঠেছে তা জুমের প্রতিষ্ঠাতা এরিক ইউয়ানের ১৭ বিলিয়নেরও বেশি ডলারই প্রমাণ করে!
PicsArt
ফটো এডিটিং এপ হিসেবে পিক্স আর্ট এর জনপ্রিয়তা অনেক আগে থেকেই। মোবাইলেই প্রফফেশনাল ফটো এডিটিং এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে ইতোমোধ্যেই অনেক ইউজারের মন জিতে নিয়েছে পিক্স আর্ট। তবে ফটো এডিটিং এর জগতে প্রতিযোগীর কোনো অভাব নেই। লাইট্রুম, স্ন্যাপসীড বা প্রিজমা…সব্বাই কাজ করে যাচ্ছে নিজেদের আরো উন্নততর করতে যাতে ফটো এডিটিং এক্সপেরিয়েন্স হয়ে ওঠে অনবদ্য। এই প্রবল প্রতিযোগীদের মধ্যেও পিক্স আর্ট নিজের জায়গা করে নিয়েছে পাকাপোক্তভাবেই। হয়ে গেছে ২০২০ সালের অন্যতম ট্রেন্ডী এপ্লিকেশন।
Tiktok
২০১৭ সালে আসার পর থেকেই ট্রেন্ডী আর জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে টিকটক। লিরিক্স সিঙ্ক্রোনাইজেশনের ্মাধ্যমে মিউজিক ভিডিও তৈরী এবং ভিডিও শেয়ারিং সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটক ২০১৮ এর সবথেকে জনপ্রিয় ফ্রি এপসের তকমাও পেয়েছিলো। টিকটক অনেক পাড়াগায়ের মানুষকে রীতিমত তারকাক্ষ্যাতি এনে দিয়েছে, অনেককে এনে দিয়েছে অর্থও! লকডাউনে অন্যান্য সোশাল মিডিয়ার মতোই টিকটকেও তাই মানুষের ঢল নেমেছে ভালোভাবেই! তথ্য পাচারের অভিযোগে ইউ এস এ তে যদিও টিকটক কঠোর মনিটরিং এ রয়েছে এবং ভারতে হয়েছে নিষিদ্ধ, তবুও টিকটককে ২০২০ সালের ট্র্যাণ্ডী এপ্লিকেশনের তালিকায় রাখতেই হবে!
এই ছিলো বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তথা ট্র্যাণ্ডিং কিছু মোবাইল এপ্লিকেশন। এই তালিকায় গেমসগুলোকে বাদ দিয়ে বিবেচনা করেছি। এই ট্রেণ্ডিং এপসগুলো ছাড়াও যথারীতি পুরোনো জনপ্রিয় এপ্লিকেশনগুলোও নিজেদের জায়গা ধরে রখেছে… গুগলের মতে ২০২০ এ সব থেকে বেশি ডাউনলোড হওয়া ১০ টি এপ্লিকেশন হলো:
- TikTok
- Zoom
- Messenger
- Google Meet
- Google Classroom
- Snapchat
- You Tube
লিখেছেন: অরিন্দম স্যান্যাল দিপ্ত