সাইকোলজি অফ কিকিং পিপল আউট ফ্রম লাইফ

লেখক আমি মোটেও না। কিন্তু লেখা লেখি করা আমার মনের শান্তি। গত চার বছর ধরে অনেক পরিশ্রম করেছি তাই আজকে হয়ত টকস্টোরিতে লিখছি। নামের পাশে অনেক পদবিও হয়েছে। কিন্তু এই পথে চলতে চলতে হারানোর সংখ্যা খুব কম নয়। হারিয়েছি অনেক কিছু। আমার মতো বয়সের ছেলে–মেয়েরা হয়ত কেউ টিকটক করছে, চিল করে বেড়াচ্ছে, বিকাল হলে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে। কিন্তু আমি ঘুম থেকে ঊঠেই কোন কাজ নিয়ে বসে যাই।

যদি আমি আমার জীবনের সময়ের কথা বলি তাহলে এই চার বছরে আমার অনেক বন্ধু জীবন থেকে চলে গেছে। তাদের মধ্যে হয়ত আমি কিছু ভুল করেছি কিনবা তারাই ভাবছে আমি ভুল করেছি। কিন্তু আমি পিছনে ফিরে চেষ্টা করেছি তাদেরকে বলার যে হয়ত গল্পটা বদলে যেতে পারতো। কিন্তু সমাজে কিছু মানুষ বড় নিষ্ঠুর হয়। তাদের কাছে মনে হয় একবার মন থেকে কেউ চলে গেলে বা কাউকে জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে তারা ভালো থাকে।

কিন্তু যদি আমি বলি আপনাকে ভালো থাকা এতো সহজ নয়। জীবনে ছোট একটা ভালো লাগাও আপনাকে সেফটিপিনের মতো খোঁচা মারতে থাকে। আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিল তার জীবন থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়ে সে ভালো থাকবে। ওই যে ভালো থাকা সহজ নয়। আপনি আপনার জীবন থেকে কাউকে সরিয়ে দিয়ে যদি আপনার বার বার বলা লাগে “ আমি সবাইকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে ভালো আছি” তবে কি আপনি সত্যি ভালো আছেন? তাহলে আপনাকে কেন বার বার নিজেকে , সবাইকে বলতে হবে এইটা।

আমার অনেক হাসি পায় আমাকে দেখে মাঝে মাঝে। কেন জানেন? আমি যদিও জীবনে সবচেয়ে বড় জায়গায় কাজ করেছি কিন্তু আমি প্রতিবার ধাক্কা খেয়েছি অনেক। ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আমার জীদ বেড়েছে, আরো পরিশ্রম করেছি। কেউ আমাকে আনপ্রফেসনাল বলেছে জীবনে। আমি আরো প্রফেসনাল হয়েছি। আমি আরো নতুন প্রজেক্টে যুক্ত হয়ে গেছি। আমাকে কেউ বলেছে, জীবনে এতো ব্যস্ত তুমি আরো ব্যস্ত হয়ে যাও, কাজ করো। আমি অনেক অনেক কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সেই মানুষগুলো কোথায় আছেন?

তারা কেমন আছেন যারা এইগুলো বলে আমাদের মতো অল্প বয়সী মানুষদের মনে দাগ কেটে দেয়। আমি মাঝে মাঝে ভাবি যদি আমাদের মনের মধ্যে কন্ট্রোল রিমুভ বাটন থাকতো তাহলে আমরা শুধু ওই দাগ রিমুভ করে মানুষগুলোকে রেখে দিতে পারতাম। আপনার জীবনে দশজন মানুষ আছে এবং আপনি তাদের মধ্যে ২ জনকে বাদ দিয়ে খুব সুখে থাকার কথা ভাবতেই পারেন কিন্তু ওই দুইজন আপনার জীবনের অংশতো ছিল তাই না? তাহলে কিভাবে করবেন জীবনে মুভ অন?

কিভাবে আর কাউকে কখনো আপনাকে বলতে হবে না যে “ I just kicked you out of my life” ? যখন আপনি এই কথা গুলো আপনার জীবন থেকেই সরিয়ে দিবেন। আপনি কখনো বলবেন না কাউকে রিমুভ করে দেয়ার কথা। হুট করে সরে আসলে ব্যাথাতো লাগবেই। আস্তে আস্তে সরে আসতে পারেন। হয়ত প্রথমে আপনি তাদের সাথে কথা বলা কমিয়ে দিতে পারেন , তারপর তাদের কে নিয়ে ভাবা , প্লান করাও বন্ধ করতে পারেন।

তারপর হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। উফ! মিথ্যা বলে দিলাম একটা। আমরা আমাদের জীবন থেকে কাউকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে পারি না। আমরা পারি না কারন আমরা মানুষ। দিনশেষে আমাদের চোখের সামনে সেই মানুষটা চলে আসে। তারপর আপনার মাথায় প্রশ্ন আসে – কেন করলো ও আমার সাথে এইটা? কি ভুল? কেন করলো এইটা নিজে নিজে মাথায় চিন্তা করে নিজের মোবাইল নিন, ফোন দিন। তারপর প্রশ্ন করুন সেই মানুষগুলোকে কেন করলো তারা এইটা?

আমরা সহজেই সবসময় অনেক রেগে যাই। রেগে গিয়ে আমরা হেরে যাই। আমি অনেকবার হেরেছি জীবনে কিন্তু আমি আপনাকে এই লেখার মাধ্যমে আজকে বলতে চাই, সাইকোলজি অফ কিকিং পিপল আউট মানেই আপনি তাদের আরো কাছে চলে যান। আরো ভাবেন তাদের নিয়ে।
কেন কষ্ট পাবেন? শুধু শুধু নিজে নিজে? আমি নিজেকে সাবলম্বী মনে করি। আমার এইটুকু ক্ষমতা আছে যে আমি কাউকে সামনে যে বলতে পারবো- কেন? আমি কাউকে বলবো না যে না, আমি কথা বলতেই চাই না। কারন আমি এইটা বলা মানেই আমি দূর্বল এবং আমি কথা বললেই কনভেন্স হয়ে যাবো এবং সেই মানুষগুলোর সাথে আবার চলে যাবো।

আপনি বলবেন ক্ষতি কি তাতে?তারপর যদি আবার কষ্ট পাই? আর সহ্য করার ক্ষমতা কি আছে? থাকবে না কেন? একবার তো চেষ্টা করে দেখুন। যদি না বদলায় তবে সোজা হিমুর মতো হেঁটে যান আর বলতে হবে না কাউকে জীবনে – বার করে দিলাম তোমাকে জীবন থেকে।
কারন কেউ কারো জীবনে থাকে না। থাকে তাদের সাথে কাটানো সময়। এখন আপনি বলেন সময় কি আপনি “কিক” করে বার করে দিতে পারবেন? সময় তো চলবে, সাথে সাথে সামনে থাকা সব কিছু মনে পড়বে।

তাহলে কি লাভ হলো ? তাহলে কি সাইকোলজি অফ কিকিং পিপল আউট আপনার জন্য কাজ করে গেল? আমি অনেক অযথা উপদেশ দেই, আমাকে একটা উপদেশ দিতে পারেন আপনারা। তার আগে বলুন, আপনি এখন কি কাউকে জীবন থেকে বার করে দিবেন? না , জয়যুক্ত হোক আসা করছি!

জয়িতা ব্যানার্জী, সিইও, টকস্টোরি

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।