খেলার জগত, হেলার জগত নয়

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি প্রবন্ধ পড়তে পড়তেই আশিষ খেয়াল করলো বেশির ভাগ আক্রান্ত রোগীই মারা যাচ্ছে শ্বাস কষ্টে অথবা পরিমিত অক্সিজেনের অভাবে। এ থেকে আশিষের মাথায় প্রশ্ন খেলা করতে লাগলো কেন এতো মানুষ শুধু মাত্র অক্সিজেনের অভাবেই মারা যাচ্ছে৷ এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে যেয়ে প্রথমেই যেই সম্ভাবনার কথা আশিষের মাথায় এলো, সেটি হলো মানুষের ফুসফুসের দুর্বলতা অথবা সর্বোচ্চ সক্ষমতায় কাজ করতে না পারা। আশিষ এই ব্যাপারে যতই গভীরে যাওয়া শুরু করলো ততই তার ধারণাটি বদ্ধমূল পরিনত হতে থাকলো। তার পাশাপাশি তার করা ছোটখাটো গবেষণাও তার এই ধারণাকে আরো পাকাপোক্ত করতে সাহায্য করে।

সে দেখতে পায়, মূলত যাদের ফুসফুস তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী তারা অন্যদের থেকে করোনা ভাইরাসে কম আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু যাদের ফুসফুস বয়স সংক্রান্ত, ধুমপান ও অন্যান্য কারণে তুলনামূলক কম শক্তিশালী ফুসফুসের অধিকারী তাদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কয়েকগুন বেশি। তার এই গবেষণা শেষে সে বুঝতে পারে মানুষ যদি আরো বেশিদিন বেচে থাকতে চায় ও করোনার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে বাচতে চায় তাহলে তাদের নিজেদের শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেয়া খুবই জরুরি।

করোনা পরবর্তী সময়ে অনেকেই নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেয়া শুরু করবে। এর সাথে সাথে, উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনাময় পথ খুলে যাবে যার বিস্তার আগে খুবই কম ছিল। স্পোর্টস বিজনেস খুবই পরিচিত ও সম্ভাবনাময় একটি অংশ হতে চলেছে আন্ট্রেপ্রনিউরশিপ পৃথিবীর জানা অজানা অলি গলিতে।

স্পোর্টস বিজনেসের অন্যতম সুবিধা হলো এটি অনেক বিস্তৃত একটি সেক্টর যেখানে একজন উদ্যোক্তা নিজ পছন্দমতো বিভাগে কাজ করতে পারে অথবা ইচ্ছে করলে পুরো বিভাগটিতেই কাজ করতে পারে। এছাড়া এই সেক্টরে চাইলে অতি সল্প পূজি নিয়েও ষ্টার্টআপ শুরু করা যায়। এতো ফ্লেক্সিবল একটা বিভাগ হওয়াতে এটি নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ বয়ে নিয়ে আসবে৷ এসব দিকের কয়েকটি অংশ নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবোঃ

আউটফিট মেকিংঃ
স্পোর্টস বিজনেসের আজকের প্রথম টপিকটি হলো আউটফিট বা কাপড় তৈরী করা। আমরা সবাই জানি, খেলাধুলা খুবই শারীরিক পরিশ্রমের কাজ। তাই এর জন্য বিশেষায়িত কাপড় পড়ার প্রয়োজন হয়। এটি হতে পারে অন্যতম লাভজনক একটি শাখা। কারণ, যেহেতু মানুষ নিজেদের শারীরিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগী হবে তাই এই বিশেষায়িত কাপড়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। তাই এতে বিনিয়োগ করলে ক্রমেই বর্ধিতমান বাজারে পরিচিতি ও লাভের খাতা দুটোর বৃদ্ধি পাবে। আউটফিট মেকিং শাখায় আসার জন্য মোটামুটি মধ্যম পরিমাণের পুজি হাতে নিয়ে শুরু করা সম্ভব।

তবে এতে নেটওয়ার্কিং ও মার্কেটিং, এই দুইটি জিনিস খুবই গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে ।নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে কম উৎপাদন খরচে কিভাবে সবচেয়ে ভালো পণ্য পাওয়া যায় ও তা কিভাবে ক্রেতার হাতে সবচেয়ে সহজ ও সুলভ মূল্যে পৌছানো যায় তা নির্ধারণ করা যাবে। এর পাশাপাশি মার্কেটিং এর দিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ, এটি মধ্যক পূজির শাখা হওয়াতে বেশিরভাগ স্পোর্টস উদ্যোক্তা এই দিকে মনোযোগী হবে। তাতে করে প্রতিযোগীতা বাড়বে। তার মাঝে ভালো মার্কেটিং পদ্ধতি না থাকলে অথবা ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ না করতে পারলে উদ্যোগের সফলতার মুখ দেখার চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।

স্পোর্টস কমপ্লেক্সঃ
এটি হতে পারে স্পোর্টস বিজনেসের অন্যতম লাভজনক শাখা। আমাদের এই যান্ত্রিক জীবনযাপন পুরোটাই শহরকেন্দ্রিক। শহরেই আমাদের আনাগোনা ও কমফোর্টিবিলিটি বেশি থাকে। তবে শহরের একটি অসুবিধার দিক হলো এতে সাধারণত খোলামেলা জায়গা দেখা যায় না। বিশেষত ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো যেসব বড় বড় ও ব্যস্ত শহর রয়েছে সেখানে খোলা যায়গা খুজে পাওয়া বেশ দুস্কর। তাই শারীরিক কসরত বা সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গার অভাব রয়েছে শহরগুলোতে। এখানে নতুন উদ্যোক্তারা বেশ সম্ভাবনাময় কিছু উদ্যোগ শুরু করতে পারেন। তার মাঝে অন্যতম হলো স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরী করে মানুষদের স্বস্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেয়ার সুযোগ করে দেয়া।

এটি অমিত সম্ভাবনার অধিকারী হলেও এর বিশেষ কিছু অসুবিধা ও সেই অসুবিধার ফলে সুবিধাও রয়েছে। অসুবিধাটি হলো এই উদ্যোগ নেয়ার জন্য তুলনামূলক বড় পুজি হাতে নিয়ে শুরু করতে হবে। কারণ, স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরী করার জন্য জমির ব্যবস্থা করা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনা ও তৈরীর উপযোগী করার জন্য বেশ পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয়। এবার আসি সুবিধার কথায়, যেহেতু প্রচুর পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয় তাই খুব বেশি উদ্যোক্তা এই দিকে তাদের অর্থ লগ্নি করবে ন। তার ফলে প্রতিযোগীতা কম থাকবে। তাই ক্রেতার পরিমান তুলনামুলক বেশি থাকবে। এর দিকে থেকে একটি বিশাল পরিমানের অর্থ লাভের খাতায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

স্পোর্ট এটায়ার ইমপোর্টঃ
এটি একটি পরিচিত উদ্যোগ হলেও স্পোর্টস ডেডিকেটেড ভাবে উদ্যোগ কমই রয়েছে। আমাদের দেশে অনেকেই স্পোর্টসম্যানশিপ ক্লোদিং অথবা এটায়ারকে একটু ভিন্নভাবে দেখে থাকেন। তারা তাদের স্বাস্থ্যকে বেশি গুরুত্বের সহিত নেন ও এতে নিজের সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে থাকেন। তার পাশাপাশি তারা কমফোর্টেও বেশ গুরুত্ব দেন। এর জন্য তারা আইকনিক স্পোর্টস ব্র‍্যান্ড যেমন জিমশার্ক, আন্ডার আর্মার, নাইকি, এডিডাস প্রভৃতি ব্র‍্যান্ডের স্পোর্টস আউটফিট খুজে থাকেন। তবে, এদেশে এদের কোনো অফিশিয়াল আউটলেট না থাকায় প্রায়ই সেগুলো খুজে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা কতটুকু অথেনটিক এ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান থাকেন। আর করোনা ভাইরাসের পর এই ধরনের আউটফিটের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে যে কেউ এটির উদ্যোগ নিতে পারে। এটি করার দুটি পদ্ধতি রয়েছে।

প্রথমত ব্র্যান্ডের অফিশিয়াল সেলিং ওয়েবসাইট থেকে কাষ্টমার হিসেবে অর্ডার করা যাতে প্রয়োজন হবে শুধুমাত্র একটি ক্রেডিট কার্ড। অথবা ব্র্যান্ডগুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাদের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হওয়া৷ তবে এর জন্য ব্র‍্যান্ডগুলোর কিছু বিজনেস পূর্বশর্ত বা প্রি কন্ডিশন থাকে। সেগুলো পূরণ করার পরই তারা কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে।

জিমনেশিয়ামঃ
পূর্বেই আমরা আলোচনা করেছি আমাদের শহরকেন্দ্রিক জীবনে সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়া ও তার জন্য এক্সারসাইজ স্পেসের অভাব কত বেশি৷ তবে এটির একটি ভালো বিকল্প হতে পারে জিমনেশিয়াম। এখানে স্বপ্ল জায়গায় অনেক মানুষ একসাথে ব্যায়াম ও শারীরিক কসরত করতে সক্ষম। এই উদ্যোগের সবচেয়ে বড় সুবিধা ও অসুবিধা হলো এর ওয়ান টাইম ইনভেষ্টমেন্ট। প্রথমবারের পর মেইনটেইন্যান্স খরচ ছাড়া তেমন কোনো বড় ইনভেষ্টমেন্ট করতে হয় না৷ তবে অসুবিধা হলো একটি জিমে থাকা যন্ত্র সামগ্রীগুলো তুলনামূলক দামী হওয়ায় কম পূজি নিয়ে এই ধরনের উদ্যোগ শুরু করা যায় না। তবে এটি শুরু করলে ও ভালো বিজনেস ষ্ট্র‍্যাটেজি ও পরিবেশ বজায় রাখতে পারলে এটি খুবই লাভজনক একটি উদ্যোগে পরিনত হতে পারবে৷

স্নিকারসঃ
আমাদের দেশের তরূণদের মাঝে সম্প্রতি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্নিকারস কালচার। ইউ এস অথবা অন্যান্য দেশে এই জিনিসটা নিয়ে একধরনের ক্রেইজই চলে বলা যায়। স্নিকার এর জন্য আলাদা আলাদা আউটলেটই থাকে ও নতুন কোনো মডেল বাজারে আসার সাথে সাথে মানুষজন ভিড় করে সেইসব কিনে থাকে। আগে বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন মাতামাতি না থাকলেও হাল আমলের তরূণরা অনেক বেশি ফ্যাশন সচেতন হওয়ায় তারাও এই দিকে ঝুকছে। বাস্কেটবল স্নিকারস, লাইফষ্টাইল স্নিকারস, হাইপড স্নিকারস, কোলাবোরেটেড স্নিকারস সহ আরো নানা ঘরানার স্নিকারস কেনার জন্য মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শহরেই কোনো না কোনো জুতার দোকানে কেডস পাওয়া গেলেও এইসব স্নিকার কখনোই খুজে পাওয়া যায় না। অনেক দোকানে আবার লো কোয়ালিটি রেপ্লিকা বিক্রি করা হয় যা ক্রেতার চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়। তাই হালসময়ের তরূণদের জন্য মার্কেট তৈরী করতে চাইলে এই দিকটি খুবই সম্ভাবনাময় ও লাভজনক একটি উদ্যোগ হতে পারে।

এরকম আরো নানা রকম ভাবেই স্পোর্টস বিজনেসে প্রবেশ করা যায়। প্রথমেই আমরা বলেছি, স্বল্প পুজি অথবা বড় এই বিভাগটি সবার জন্য উন্মূক্ত ও সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাহলে আর দেরি কিসের? একটি ভালো দেখে বিজনেস স্ট্র্যাটেজি তৈরী করে কাজে নেমে পড়ুন আজই। কথায় আছে না, উড়াইড়া দেখো ছাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।

অনিরুদ্ধ খান সাদী

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।