প্রতিবছর বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যাচ্ছেন। সেখানে শিক্ষা পড়াশোনা করে অনেকেই গবেষণা করছেন, বিশ্ববাসীকে নতুন কিছু উপহার দিচ্ছেন। অনলাইনের এই সহজলভ্যতার যুগে সবকিছু আজ হাতের মুঠোয়। চাইলেই সব তথ্য খুব সহজে পাওয়া সম্ভব। কোথায় কী সুযোগ রয়েছে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন স্কলারশিপ দিচ্ছে এসব তথ্য আজকাল অনলাইনেই জানা সম্ভব। তবে প্রয়োজন একটু উদ্যোগ আর জানার আগ্রহ।
আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনে বাইরে যাওয়া মানুষদের সংখ্যাগরিষ্ঠই রাজধানী এবং তার আশপাশের। এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপিঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত তথ্য সমন্বয়ের অভাবে অনেকেই উচ্চশিক্ষা অর্জনে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়েন। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার সাথে গবেষণাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেই আক্ষেপ দূর করতে উদ্যোগী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাকবির হোসেন। ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দাঁড় করালেন ‘চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি (সিইউআরএইচএস)’। প্রথমে নিজ বিভাগসহ অন্য একটি বিভাগের কিছু সিনিয়র ভাই এবং জুনিয়রদের নিয়ে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলেন। সেখানে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে শেয়ার করতে থাকেন।
ধীরে ধীরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ৬০০০। গ্রুপে যেমন রয়েছে বর্তমান শিক্ষার্থী তেমনই রয়েছে বিদেশে পড়ছেন এমন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়েরই বেশ কয়েকজন গবেষণাপিপাসু শিক্ষকও।
বর্তমানে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সদস্য রয়েছে ১৬ জন। পাশাপাশি সংগঠনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের প্রতিনিধিত্ব।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ঘিরেই তাদের কার্যক্রম।
‘তথ্যই শক্তি’ এ বিশ্বাসকে ধারণ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা এবং গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
সংগঠটির ফাউন্ডার তাকবিরের ভাষায়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তথা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার উদ্দেশে উন্নত দেশগুলোয় গমনের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেশি কয়েকটি দেশ যেমন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এমনকি নেপালের চেয়েও অনেকটা পিছিয়ে আছে। আর তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম একটি হলো সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য না পাওয়া। তাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্কলারশিপ, উচ্চশিক্ষায় আমাদের অগ্রজদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি, গবেষণার হাতেখড়ি, আইএলটিএস ও জিআরই প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা , সর্বোপরি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা। যেনো আমরাও কোনোভাবেই তথ্যের অভাবে সুযোগবঞ্চিত না হই।
বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে তাকবির জানান, আমরা শুরু থেকেই ফেসবুকের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ও গবেষনামূলক বিভিন্ন তথ্য সবার কাছে শেয়ার করছি, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিদেশে আছেন তাদের অভিজ্ঞতা সবার কাছে তুলে ধরার জন্য আমরা অনলাইনে লাইভ সেশনের আয়োজন করছি। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক বেশ কিছু সেমিনারও ইতোমধ্যে আমরা আয়োজন করেছি।
কোনো বাঁধার মুখে পড়েছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নোত্তরে তাকবির জানান, নবীন একটা প্লাটফর্ম হিসেবে স্বভাবতই বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন আমাদের হতে হচ্ছে। কিন্তু এসব অতিক্রম করেই সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করছি প্রত্যেকে। জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের আদনান মান্নান স্যারের কথা না বললেই নয়। তিনি সবসময়ই তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত পরামর্শ দিয়ে আমাদের সাথে ছিলেন।
তাদের আশা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে উচ্চশিক্ষার ও গবেষণার ক্ষেত্রে যথেষ্ট কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন, তাদের সাথে নবীনদের সেতুবন্ধন তৈরি হবে। ফলে তাদের দেখে আগ্রহীরা অনুপ্রেরণা পাবে।
তারা স্বপ্ন দেখেন, একদিন গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষায় আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করবে এবং আমাদের দেশ থেকে আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং কিংবা ওয়াটসন-ক্রিক এর মতো বিশ্বমানের বিজ্ঞানী তৈরি হবে।