সফল স্টার্ট‌আপনামা

sucessful-startup-talkstory

উদ্যোক্তা হওয়া কেবল একটি স্বপ্ন নয়, এটি স্বপ্ন, সদিচ্ছা ও সাহসের সমন্বয়। স্মল বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ শতাংশ উদ্যোগ প্রথম দুই বছরের মধ্যে ব্যর্থ হয়। ৫০ শতাংশ উদ্যোগ ব্যর্থ হয় প্রথম পাঁচ বছরে। এর মধ্য দিয়েও বেরিয়ে আসে সফলতার গল্প। চলুন আজ বিশ্বের নানা দেশের কিছু সফল উদ্যোগের গল্প শোনা যাক।

পাঠাও
বাংলাদেশ মাত্র ৫টি মোটরবাইক ও ৩০ জন মানুষ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল পাঠাও। শুরুতে তাদের কার্যক্রম শুধু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যসামগ্রী বা পার্সেল যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৬ সালে চালু হয় পাঠাওয়ের অফিশিয়াল অ্যাপ। এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বহু গ্রাহক পাঠাও ব্যবহার করছেন। ‘রাইড শেয়ারিং’–এর মাধ্যমে মানুষের সময় বাঁচানোর পাশাপাশি আয় করার একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে পাঠাও ফুড, পাঠাও পার্সেল, পাঠাও কার। শহরের মানুষের জীবনযাত্রায়ও বড় প্রভাব ফেলেছে এই অ্যাপ।

উড়ান
ভারত উড়ানকে বলা হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে সাফল্য পাওয়া ভারতীয় স্টার্টআপগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি মূলত ব্যবসায়ীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও বেচাকেনা করতে পারে। অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই যুক্ত হতে পারেন ক্রেতা, বিক্রেতা, সরবরাহকারী। ভারতের আরেকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ফ্লিপকার্টের কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা মিলে উড়ান চালু করেছিলেন। বর্তমানে ২৯টি রাষ্ট্রের দেড় লাখের বেশি ক্রেতা-বিক্রেতা উড়ান ব্যবহার করছেন।

বার্ড
যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপের মাধ্যমে ছোট আকৃতির একধরনের ইলেকট্রিক স্কুটারে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানটি। যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। অল্প সময়েই তারা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বার্ডকে বলা হচ্ছে উবারের ‘ইলেকট্রিক’ সংস্করণ। ৩০টি শহরে বার্ড চালু আছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল্য এখন প্রায় ২০০ কোটি ডলার। এই স্কুটারগুলো দিয়ে ঘণ্টায় ১৫ মাইল যাওয়া সম্ভব। শহরের বিভিন্ন জায়গায় বার্ড-এর ‘পার্কিং স্ট্যান্ড’ আছে। এক জায়গা থেকে নিয়ে আপনি আরেক জায়গায় রেখে দিতে পারবেন। টাকা দিতে হবে অ্যাপের মাধ্যমে। চালু করলেই খরচ হবে ১ ডলার (প্রায় ৮৪ টাকা), এরপর প্রতি মিনিটের জন্য দিতে হবে ১৫ সেন্ট। বার্ডের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ভেনিসে অবস্থিত।

মেডিব্লক
দক্ষিণ কোরিয়া ব্লকচেইন হলো ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করার একটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন হাসপাতালের মেডিকেল রেকর্ড সংরক্ষণ করে মেডিব্লক। বিশ্বের চিকিৎসা পদ্ধতি বদলে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কোরিয়ার এই প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিল। বিভিন্ন হাসপাতালে ছড়িয়ে থাকা তথ্য এক করে তারা এমন একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করতে চায়, যা রোগী, চিকিৎসক, গবেষক—সবার কাজে লাগবে। এরই মধ্যে তাদের আয় ৩ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

ট্রৌভা
যুক্তরাজ্য এই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ‘অ্যান্টি অ্যামাজন’ হিসেবে দাবি করে। বেশির ভাগ অনলাইন শপ যেখানে বড় ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে ট্রৌভার বিশেষত্ব হলো, তারা ছোট ছোট দোকানের সঙ্গে ভোক্তাদের যোগসূত্র তৈরি করে দেয়। এখানে ট্রৌভার কাজ হলো মূলত বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্যটি নিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া। ২০১৫ সালে মান্দীপ সিয় ও এলেক্স লোইজু নামের দুই উদ্যোক্তা ট্রৌভা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যেই তাঁরা আয় করেছেন প্রায় ৭৬ লাখ ইউরো। যুক্তরাজ্যের বাইরেও দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

লিখেছেন : সেতু সাহা

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।