থ্রি মাস্কেটিয়ার্স!

ইউটিউবে রায়ান নামে এক পিচ্চি শুধু খেলনার রিভিউ করেই বনে গিয়েছিলো সেরা উপার্জনকারী ইউটিউবারদের একজন। আমরা বেশ বড় করে ফিচারও করেছিলাম তারে নিয়ে। তবে, উপার্জনের কথাটা যদি বাদ রাখি ; তাহলে আমাদের চট্টগ্রামের এই ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স ‘ ইউটিউবিং আর কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে কোন অংশে কম যান না!

কারা এই থ্রি মাস্কেটিয়ার্স!
ফাহাদ লোকমান, অপু দ্য স্পাইডার আর হালের আসিফ আহমেদ শোভন ; এই তিনজনই আমাদের থ্রি মাস্কেটিয়ার্স!

শুধু চাঁটগা বলেই নয় ; কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে তারা বাউন্ডারী, সীমা-পরিসীমা অনেক আগেই পার করে ফেলেছেন। যদিও তিনজনই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাতেই কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের কাজগুলো করেন, কিন্তু এর আবেদন শুধু চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যেই সীমিত নয়! দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ও দেশের বাইরে ( বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে) উনাদের ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা রয়েছে।

খুব আয়োজন করে এই তিনজনের সাথে বসার সুযোগ তো নেই এখন ; তাই মুঠোফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া ছিলো ভরসা! অবশ্য চাকরির সুবাদে ফাহাদ লোকমান আরব আমিরাতেই অবস্থান করছেন।আড্ডা, গল্প জমলো মেসেঞ্জারের নীল দুনিয়ায়!

আসিফ আহমেদ শোভন
ফাহাদ লোকমানই বলা শুরু করলেন প্রথমে ; নিছকই চাঁটগাইয়া ভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমার এসব শুরু করা! পরে দর্শক ফিডব্যাক দেখে মনে হলো আমি এটা কন্টিনিউ করতে পারি। সবসময় মাথায় ছিলো ; নিজের ভাষায় নির্মল বিনোদন সাথে একটু সামাজিক ইস্যুগুলো নিয়ে আসা! তাড়াতাড়ি আমাকে চ্যানেল মানিটাইজেশন করাতে হবে ; খুব বেশী পপুলার হতে হবে এসব একদমই মাথায় ছিলো না! ইনফ্যাক্ট, এখনো নেই বলেই জানালেন ফাহাদ। নির্মল বিনোদন, সুস্থ কন্টেট – যেটা সববয়সী অডিয়েন্স এর কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে, সেটাই ছিলো টার্গেট।ফাহাদের ‘চাঁটগাইয়া লাখা ‘ তো চট্টগ্রামের ঘরোয়া নামে পরিণত হয়েছিলো একসময়।

এখানে যোগ করলেন অপু! অপু দ্য স্পাইডার। বললেন – আসলে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে দুইটা জিনিস খুবই দরকার – আপনার টার্গেট অডিয়েন্স আর অবশ্যই আপনার ভেরিয়েশন। কন্টেন্ট ক্রিয়েশন কখনোই রাতারাতি মানি মেকিং মেশিন হতে পারে না ; সেটা লক্ষ্যও না হওয়া উচিত। তবে একাগ্রতা আর বৈচিত্র্য ; এই দুইটা থাকলে ভালো কিছু অবশ্যই আসবে।

আসিফের গল্পটাও এরকমই ; শুরুতেই জানালেন তাঁর অনুপ্রেরণা কিন্তু ফাহাদ লোকমানই! ফাহাদ লোকমান থেকেই আসিফ ও তাঁর টীম ইন্সপায়ার্ড। চিটাইঙ্গা বুলেট নামেই আসিফ এবং তাঁর টীম অপারেট করছেন। সম্ভবত চাঁটগার প্রমিজিং কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে তাঁরা শীর্ষেই আছেন এখন।

তিনজনের কাছেই কমন একটা প্রশ্ন রাখলাম – কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে ভালো করার উপায়টা কী?
তিনজনেরই প্রায় অভিন্ন সুর ; কাউকে অনুপ্রেরণা মানা যেতেই পারে, তবে মোটেও কপি ক্যাট হওয়া যাবে না। হালের ট্রেন্ডগুলো সম্বন্ধে খবর রাখতে হবে, টেকনিক্যাল বিষয়াদিও মাথায় রাখতে হবে আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার -কোলাবোরেশানের চেষ্টা করতে হবে। সেটা নিজেদের মধ্যে হতে পারে, বা বাইরের কারো সাথেও। দুনিয়া জোড়া ইউটিউবিং বা কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে এটা একটা ট্রেন্ড এখন ; যদিও আমাদের এখানে ঐ অর্থে কোলাভোরেটিভ কাজ খুব একটা হয়নি। তবে, পরিবর্তন তো আসবেই।

আর শুধু মানিটাইজেশন দিয়ে খুব বেশী কিছু করা যাবে না বা খুব বেশী আগানো যাবে না। এটা সত্যি দেশে আঠারো কোটি মানুষ আছে আর তাই অনেকেই সাবস্ক্রাইবারের ব্যাপারে অতি আত্নবিশ্বাসী থাকেন ; তবে সবসময় সবার ভাগ্য হালের Carryminati এর মত নাও হতে পারে ( সাবস্ক্রাইবারের দিক থেকে) । সেক্ষেত্রে এই তিনজনের পরামর্শ স্পন্সর ম্যানেজ করা। এবং অতি অবশ্যই স্পন্সরকে প্রমোট করা। তার জন্য যুতসই কন্টেন্টের কোনও বিকল্প নেই!

ফাহাদ লোকমান
কন্টেন্ট ইজ কিং বলে যে একটা ব্যাপার প্রচলিত আছে সেই জিনিসটার সাথে কম্প্রোমাইজেশন চলবে না!

নিজেদের পোর্টফোলিওতে বেশ অসাধারণ কিছু কাজ জমা হয়েছে ইতিমধ্যেই। কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের বাইরে ফাহাদ যেমন এক্সপ্রেস মল সহ বিভিন্ন কোম্পানির জন্য বানানো কন্টেন্টে কাজ করেছেন ; আসিফও এক্সপ্রেসমল, সাইডার, কথা অ্যাপ সহ বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কাজ করেছেন।
আর অপু দ্য স্পাইডার! তাঁর এক ‘বিয়ে হত্তে গইজ্জুম’ ভিডিওটি তো মাকড়সার জালের মতো অন্তর্জালে ছেয়ে গেছে! কন্টেন্ট ভেরিয়েশনের এক অনবদ্য উদাহরণ এই কাজটি।আঞ্চলিক গানে রোমান্টিকতার এক অভুতপূর্ব মিশ্রণ এই কাজটি।

CYC নামে এক উদ্যোগে সম্প্রতি জড়িত হয়েছেন এই তিনজন! Chittagong Youtube Community নামের এই প্ল্যাটফর্মের আসলে একটাই উদ্দেশ্য ; Collaborative কিছু কাজ উপহার দেয়া। চাঁটগার কন্টেন্ট ক্রিয়েশন আর ইউটিউবিং সেক্টরটা আসলেই গ্রো করছে বলেই মনে করেন তাঁরা। গাইডলাইনের ব্যাপার আছে একটা। বাইরে কিন্তু রীতিমত অ্যাকাডেমি বা আরো শিক্ষনীয় প্ল্যাটফর্ম আছে অনেক। সেই একটা জায়গা থেকে ও ভাবনা থেকেই চট্টগ্রামের এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে পেরে তারা খুশি আসলে।

তাঁরা নিজেরাও কিন্তু ঐ অর্থে ফুল টাইমার নন ; ফাহাদ যেমন এয়ারলাইনস চাকরিতে ব্যস্ত, তেমনি নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অপু আর আসিফও সমান ব্যস্ত! তবে একটা জায়গায় তাঁরা এক – They are passionate. এটা তাঁদের প্যাশন, আবেগ-অনুভূতির জায়গা।

অপু দ্যা স্পাইডার
তবে, হঠকারীতার মাধ্যমে এই সেক্টরে গ্রো করা যায় না বলেই তাঁদের মত। নিজের ভালো লাগার বিষয়গুলো নিয়ে আগে রিসার্চ করা উচিত, নীশ ( Niche) সিলেক্ট করা উচিত, এর পজিটিভ -নেগেটিভ ফিডব্যাক মাথায় রাখা উচিত, কন্টেন্টের নির্মলতার বিষয়টি ভাবা উচিত অবশ্যই। দেশীয় ইউটিউব আর কন্টেন্ট জগত নিয়ে তিনজনই বেশ আশাবাদী। তবে এটা মনে করিয়ে দিলেন তাঁরা তিনজনই – Good things take time.

নিজেদের সামাজিক ব্যাপ্তিও রয়েছে এই তিনজনের ; চাঁটগার অন্যান্য প্রমিনেন্ট ইউটিউবাররা মিলে গড়ে তুলেছেন ‘মানবতার কল্যাণে চাঁটগা’ নামে একটা প্ল্যাটফর্ম।ফাহাদ বিদেশ-বিভুঁইয়ে থেকেও যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন ; বাকীরাও খুবই আন্তরিক। এটা নিজেদের একধরনের দায়বদ্ধতা বলে মনে করেন এই তিনজন।

ফাহাদ লোকমান চাঁটগার ইউটিউবিং পাইওনিয়ার ; আর অপু এবং আসিফ লেটেস্ট সেনসেশন। কোলাভোরেটিভ কন্টেন্ট সিনারিওতে তাঁরা একটা পরিবর্তন আনতে চান ; একটা সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম উপহার দিতে চান।

 

লিখেছেন: রিদয়ানুল ইসলাম

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।