নারী তুমি অনন্য

নারী বললেই সবার প্রথমে ভেসে উঠে মায়ের মুখখানি। মায়ের মায়া ভরা মুখ, ভালোবাসার হাসি আর আদরেই আমাদের সবার বেড়ে ওঠা। আমারও তাই। জ্ঞান বুদ্ধি হবার পরে বড় বোন এরপর খেলার সাথীদের সাথে পরিচয়। এরপর স্কুল কলেজের বান্ধবী দের সাথে। আমি নিজেও একজন নারী। এভাবেই দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে নারীর সাথে আমাদের পথচলা।চলুন আজ আপনাদের আমার পথচলায় দুজন শ্রেষ্ঠ নারীর গল্প শোনাই।

আমি আমার মা কে দিয়েই শুরু করছি, কেননা আমার কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন একজন মা। আমার মা গৃহিণী। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি কি যত্নের সাথেই না সংসারটা আগলে রেখেছে। গোছানো পরিপাটি ছোট্ট সংসার। বাসার কার কি লাগবে, বাজার থেকে কি আনতে হবে, বিকেলের নাস্তা কি হবে সব কিছুই মা সামলেছেন। এখনো সামলাচ্ছেন। এখন আমরা পরিবারের চারজন সদস্য চার জায়গায় থাকি, নিজেদের প্রয়োজনে। তাই এখন মায়ের প্রয়োজন টা খুব বেশি অনুভব হয়। মায়ের কাছে কোন কিছু চাইতে হতো না, মা বুঝে যেতেন। আমাদের দুবোনের ক্ষুদা লাগলে তাকে বলতেই হতো না, ঠিক পছন্দের খাবার নিয়ে হাজির হতো সামনে। হাত খরচের টাকা থেকে তিনি আমাদের দুবোনের জন্য উপহার কিনতেন, এই অভ্যাস টা অবশ্য এখনো আছে।

আমরা শুধু বড় হয়েছি এ সমাজের কাছে, কিন্তু মায়ের কাছে এখনো সেই ছোট্ট শিশুই রয়ে গেছি। মায়েরা সংগ্রামী হয়। অনেক কষ্টের আর আত্মত্যাগের হয় মায়েদের জীবন। সেই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দিন শুরু হয় তাঁদের, আর বিরতিহীন পরিশ্রমে শেষ হয় রাতের বেলায়।

আমার এখনো মনে পড়ে, পরিক্ষার দিনগুলোতে আমি যখন খুব চিন্তায় থাকি, মা তখন পাশে বসে থাকে। “কিছু খাবি, কিছু খাবি” বলতেই থাকে। যদি বলি “এটা খাবো”, তাহলে সে আবার খুশি মনে নাচতে নাচতে সেটা বানাতে যায়। তাঁর যেন কোন ক্লান্তিই নেই। তাই তো প্রথমেই বলেছি মা হলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী। আমার জীবনে মায়ের পরেই যদি কোনো নারীর অবদান থাকে সেটা হলো আমার বড় বোন। সত্যি বলতে বড় বোন তো নয় সে যেনো আমার ছোট মা। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে‌ই এমন হয়, কেননা বড় বোন গুলো যে ছোট ভাই বোন গুলোর কাছে মায়ের মতোই হয়। আদর সোহাগ ভালোবাসা আর শাসনের যেনো কোনো অভাব থাকে না। সে নিজের জীবন থেকে নেওয়া শিক্ষা টা দিয়ে যেনো ছোট ভাইবোন গুলোকে বড় করতে চায়, আগলে রাখতে চায়। যেনো ছোট রা কোনো ভুল না করে। আমার বোন টিও এ নিয়মের ভিন্ন নয়। জ্ঞান হ‌ওয়ার পর থেকে দেখছি সে আমাকে আগলে রেখেছে ঠিক মায়ের মতোই। ওর সবচেয়ে পছন্দের জামা টা দেখিয়ে যদি বলতাম “ঈশ! কি সুন্দর জামা” পরবর্তীতে আর একটা শব্দ বলার আগেই সে জামা টা আমার হয়ে যেতো। বিয়ে হয়ে যাওয়া স্বত্তেও যেনো আমার প্রতি ভালোবাসা, শাসন এক বিন্দু পরিমাণ কমেনি। তাই তো আমার কাছে মায়ের পরে শ্রেষ্ঠ নারী হলেন আমার মাতৃতুল্য বড় বোন।

মা, বোন, বান্ধবী, সহধর্মিণী, মেয়ে সব ক্ষেত্রেই নারী যেনো অনন্য। একজন নারী এতোগুলো ভূমিকা পালন করতে যেনো তার কোনো ক্লান্তি নেই। সে যেনো হাসি মুখে সব সামলে যাচ্ছে। তবে, আমাদের সমাজে পুরুষ আর নারীর বিভাজন খুবই প্রকট। নারীর সম্মান আর স্বাধীনতা এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্থ। নারী স্বাধীনতা মানে কিন্তু রাতে নাইট ক্লাবে যাওয়া বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছেলেদের সাথে সিগারেট খাওয়া নয়, নারী স্বাধীনতা মানে নিরাপদে যাতায়াত করার নিশ্চয়তা অথবা নিজ পেশা বা পছন্দের কাজটি করার সমর্থন পাওয়া। আমরা কি সব ক্ষেত্রে নারীদের প্রাপ্য সম্মানটা দেই? নারী যে শুধু পুরুষ দ্বারাই লাঞ্ছিত হয়, বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। একজন নারী অপর একজন নারীর দ্বারাও লাঞ্ছিত হতে পারে, তার সম্মান হানি হতে পারে।

আমি নিজে একজন নারী বলে বলছি না, আমি মনে করি নারী পুরুষ সমান অধিকার শুধু বলে নয়, বাস্তব করে দেখানো উচিত। শুধু ধর্ষণ প্রতিরোধ করে নয়, তাদের সম্মান করতে শিখুন।

প্রথমে নিজের ঘরের নারীদের সম্মান করুন, শ্রদ্ধা করুন, ভালোবাসুন। প্রতিটি নারী যে অনন্য সেটার মর্যাদা দিতে শিখুন। যদি আমরা সবাই আমাদের দৈনন্দিন পথচলায় নারীকে সম্মান না করি তাহলে কখনোই আমরা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারবো না। তাই তো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছেন – “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”

লিখেছেন : সেতুসাহা

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।